ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ কেনো হয়? এর চিকিৎসা এবং লক্ষণ দেখুন

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর চিকিৎসা কি? যারা ফ্যাটি লিভার ২ দ্বারা আক্রান্ত রয়েছেন তারা এই আর্টিকেলটি দেখুন ফ্যাটি লিভারগ্রেট দুই সমস্যা কেন হয় এবং এই সমস্যার লক্ষণ গুলো কি কি আর এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় গুলো কি কি সেই সকল বিষয় নিয়ে এই আর্টিকেলে আলোচনা করব।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর চিকিৎসা

আপনি যদি ফ্যাটি লিভার রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য চলুন আমরা দেরি না করে তাড়াতাড়ি দেখে আসি লিভার গ্রেড ২ কেন হয় , ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর চিকিৎসা কি এবং ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর লক্ষণ গুলো কি কি।

ফ্যাটি লিভার কাকে বলে

আপনি কি জানেন ফ্যাটি লিভার বলতে কী বোঝায়? যখন লিভারের আশেপাশে অতিরিক্ত তেল জমে যায় এবং লিভারের রং হলদে হয়ে আসে তখন তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার বলতে বোঝায় লিভারে মূলত তেল জমে আসা।

ফ্যাটি লিভার কাকে বলে

আমাদের ওজন যখন বেড়ে যায় তখন আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের তেল জমতে শুরু করে। যদি লিভারেও তেল জমে যায় তাহলে তাকে বলা হয় ফ্যাটি লিভার ফ্যাটি লিভারে তিনটি গ্রেড রয়েছে।

আরো পড়ুন: হেপাটাইটিস সি এর টেস্ট খরচ কত বাংলাদেশ | সবচেয়ে কম টাকায়

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ওয়ান ফ্যাটি লিভার গ্রেড টু এবং ফ্যাটি লিভার গ্রেট থ্রি। প্রথম পর্যায়ে ফ্যাটি লিভার তেমন মারাত্মক নয় কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা মাঝারি অবস্থায় রয়েছে আর তৃতীয় পর্যায়ে গেলে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা চরম আকার ধারণ করবে এবং ধীরে ধীরে লিভার ফলোয়ার হবে।

লিভার ফ্যালোয়ার বলতে বোঝাই লিভারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং লিভার সঠিকভাবে কাজ না করা এই অবস্থায় মানুষের শরীর ফুলতে শুরু করবে এবং বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হবে এমনকি ব্যক্তি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে।

তাই লিভার এর যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী এখন প্রশ্ন হল কেন হয় এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা? কি কি কারনে এই ফ্যাটি লিভার এই সমস্যা হতে পারে আসন আমরা দেখে নেই ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ কেনো হয়।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ কেন হয়

অনেকের মনে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন জাগে বিশেষ করে যারা ফ্যাটি লিভার লোক যারা আক্রান্ত রয়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানতে চান যে এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কেন হয়েছে আমার থেকেও তো আরও অনেক মোটা মোটা মানুষ রয়েছে তাদের তো ফ্যাটি লিভারের সমস্যা নেই তাহলে আমার কেন হল??

শুধু মোটা হলেই যে ফ্যাটি লিভার এই সমস্যা হবে ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয় অনেক সময় অনেক অনেক মোটা মানুষেরও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থাকে না আবার অনেক সময় দেখা যায় অনেক পাতলা হালকা পাতলা ছেলে কিংবা মেয়েদেরও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা তৈরি হয়।

আসলে কেন এই ফ্যাটি লিভার এই সমস্যা হয়? ফ্যাটি লিভার সমস্যা হওয়া গেছে অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া বেশি বেশি অ্যালকোহল পান করা দীর্ঘদিন কোন ব্যাথা নাশক ঔষধ সেবন করা। এছাড়াও আরও বিশেষ কারণ রয়েছে নিচে দেখুন দাওয়া রয়েছে কারণসমূহ।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ কেনো হয়

  • ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত তৈলাক্ত কিংবা ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া।
  • দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষধ সেবন করা।
  • অতিরিক্ত অনিয়মিত জীবন যাপন করা। যেমন রাত জাগা।
  • হেপাটাইটিস বি কিংবা সি রোগ দ্বারা আক্রান্ত হওয়া।
  • স্থূলতা
  • ধূমপান বেশি করা।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা।
  • অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া।
  • ডায়াবেটিস দ্রুত রিভার কে নষ্ট করে।
  • বেশি বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম না করা।
  • টাইপ টু ডায়াবেটিস রয়েছে, এদের ফ্যাটি লিভার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
  • উচ্চমানের কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খাওয়া।।
  • হরমঞ্জনিত অসামঞ্জস্যুতা।
  • অনিমিত খাবারের অভ্যাস।
  • রাতে খাবার খাবার পরেই ঘুমিয়ে পড়া।

এই কয়েকটি কারণে মূলত ফ্যাটি লিভারের সমস্যা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় তাই এই কারণগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হবে পানি পান করতে হবে সাথে অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে আর বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলতে হবে।

আরো পড়ুন: কোরালক্যাল ডি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ১০ টি জানুন আজকেই

প্রিয় পাঠক বৃন্দ আশা করছি আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন ফ্যাটি লিভার এ সমস্যা কেন হয় এবং ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হওয়ার অন্যতম কারণ গুলো কি কি অন্যতম কারণ হলো আমাদের দৈনিক জীবন যাত্রা। অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম না করার কারণে শরীরে ফ্যাট জমতে থাকে আর শরীরে ফ্যাট জমতে থাকলে লিভার ও ফ্যাট জমবে যার ফলে সৃষ্টি হবে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা।

ফ্যাটি লিভার এর লক্ষণ সমূহ

যারা ফ্যাটি লিভার দ্বারা আক্রান্ত রয়েছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন ফ্যাটি লিভার হলে কি কি সমস্যা হয়। ফ্যাটি লিভারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে যে লক্ষণ গুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন এই ফ্যাটি লিভার দ্বারা আক্রান্ত রয়েছেন নাকি। ফ্যাটি লিভার খুব মারাত্মক রোগ নয়, প্রথম অবস্থায় এর চিকিৎসা করলে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব কিন্তু আপনি যদি এই রোগের চিকিৎসা না নেন তাহলে ধীরে ধীরে এটি লিভার কি ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং লিভারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

ফ্যাটি লিভার এর লক্ষণ সমূহ

  • ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থাকলে সব সময় ক্লান্তিবোধ কাজ করবে।
  • পেটের ডান সাইডে ওপরে খুব ব্যথা করবে। ব্যথাটি হবে কিছুটা চাপ চাপ ধরনের।
  • পেট ফেটে থাকা এবং বদহজমের সমস্যা তৈরি হবে।
  • কাজ করতে ইচ্ছা করবে না শক্তি অনেক কমে যাবে।
  • মুখ আর জিহ্বায় গন্ধ বের হবে।
  • মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব তৈরি হবে।
  • খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে আসবে।
  • ওজন ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করবে।
  • চোখ মুখে হলুদ ভাব চলে আসবে।
  • মাল মত্রের রং পরিবর্তন হয়ে যাবে।
  • শরীর ফুলে যাবে।
  • সঠিকভাবে ঘুম হবে না।
  • অল্প খাবার খেলেই পেট ভরে যাবে
  • মুখের স্বাদ তেতো ধরনের হয়ে যাবে।
  • বেড়ে গেলে ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হবে।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর সমস্যা থাকলে উপরের এই লক্ষণগুলো দেখা দিবে এমন কি আমি নিজেও ফ্যাটি লিভারগ্রেট ২ দ্বারা আক্রান্ত ফ্যাটি লিভারগ্রেট ২ ধারা আক্রান্ত থাকলে খাবারের অনিহাস সৃষ্টি হবে আর ডান সাইডের পেটের উপর অংশে বিশেষ করে দেখা হবে এই ব্যথা শুধুমাত্র ফ্যাটি লিভার থেকেই হয়।।

যদি আপনি দেখেন পেটের ডান সাইডে উপর অংশে পেটের ওপর অংশে ব্যথা করছে তাহলে মনে করবেন আপনার লিভারের কোন সমস্যা হয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে আলতাসোনো করতে হবে। আশা করছি আপনারা সকলেই বুঝতে পেরেছেন ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর লক্ষণ গুলো কি কি।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর চিকিৎসা

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর কোনো চিকিৎসা নেই। যদি আপনার লিভার এ ফ্যাটের পরিমাণ ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ হয়ে থাকে তাহলে এটি হলো গ্রেড ২ এর অংশ। যদি এর ওপরে ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে তখন ফ্যাটি লিভার গ্রেড তিন হবে। ফ্যাটি লিভার গ্রেড দিন হলে অবস্থা আরো বেশি মারাত্মক হয়ে পড়বে লিভারের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাবে।

তাই ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এ থাকা অবস্থায় ডেইলি খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে হবে তাহলে আশা করছি এই সমস্যা ধীরে ধীরে দূর হবে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থাকলে অর্থাৎ লিভারে অতিরিক্ত তেল কিংবা চর্বি জমে থাকলে খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।

ফ্যাটি লিভার গ্রেড ২ এর চিকিৎসা

  • তৈলাক্ত ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে দিতে হবে।
  • অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার বাদ দিয়ে দিতে হবে।
  • সাদা জলে ভাতের পরিবর্তনের ব্রাউন রাইস খেতে হবে।
  • তেল হিসেবে শুধুমাত্র অলিভ অয়েল কিংবা সরিষার তেল খেতে হবে।
  • দিনের অন্তত তিন থেকে চার লিটার পর্যন্ত পানি পান করতে হবে।
  • ডিমের সাদা অংশ বেশি বেশি খেতে হবে।
  • রাতে দেরি করে খাওয়া যাবেনা।
  • আর খাবার খাবার পরে ঘুমিয়ে পড়া যাবে না।
  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত হাটাহাটি করতে হবে।
  • প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
  • অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপ বাদ দিয়ে দিতে হবে।
  • ধূমপান করা যাবে না।
  • রাত জাগা যাবেনা অল্প ঘুম এগুলো বাদ দিতে হবে।
  • ফ্যাটি লিভারের জন্য নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই।
  • ওমেগা থ্রি সম্পন্ন খাবার গ্রহণ করতে হবে।

শুধুমাত্র এই কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করে চললেই আশা করছি আগামী ছয় মাসের মধ্যে ফ্যাটি লিভার লিভারের সমস্যা ছেড়ে যাবে। এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করতে উপরের এই উপায় গুলো অনুসরণ করতে হবে সাথে নিয়মিত লেবু পানি গ্রিন টি কিংবা তুলসী পাতার রস খেতে হবে।

বেশি বেশি শাকসবজি খেতে হবে ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যেমন শাক সবজি ইত্যাদি। খাবার তালিকা থেকে লাল মাংস বাদ দিয়ে দিতে হবে। যদি লাল মাংস খুব বেশি পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে প্রতি মাসে একবার খেতে পারেন তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে আর মাংসের সাথে কোন তেল রাখা যাবে না।

শুধুমাত্র এই কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করে চলেই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পাবেন ফ্যাটি লিভার গ্রেড২ এ থাকলে এর কোন চিকিৎসা কিংবা ঔষধ নেই প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রম খাবারে পরিবর্তন আনলেই আশা করছি এই ফ্যাটি লিভার থেকে আপনারা রক্ষা পাবেন।

উপসংহার

আশা করছি ওপরের আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন যে ফ্যাটি লিভার এর চিকিৎসা সম্পর্কে। ফ্যাটি লিভারগ্রেট দূরে থাকা মানে লিভারের তেলের অবস্থা মাঝারি পর্যায় রয়েছে। এই সময় বেশি বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে দিতে হবে শাকসবজি খেতে হবে আর তেল জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে

ধূমপান অ্যালকোহল এগুলো সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে অতিরিক্ত রাত জাগা যাবে না ইত্যাদি। এই কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করলেই আশা করছি আপনারা দ্রুত এই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।