আপনি কি গিরিবাজ কবুতর লালন পালন করেন?? গিরিবাজ কবুতর হল এক ধরনের খেলোয়ার কবুতর। গিরি মানে বলতে বোঝায় আকাশ এবং বাস বলতে বোঝায় উড়ান কিংবা বাজি ধরা। এই আর্টিকেলে গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায় এবং গিরিবাজ কবুতরের দাম 2025 নিয়ে আলোচনা করব।

আপনি যদি গিরিবাজ কবুতর সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন দেখুন। গিরিবাজ কবুতর কি খায় এটা বছরে কতটি ডিম দেয় এবং এই কবুতরের দাম কত সেই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে আসুন আমরা দেখে নেই গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায়।
গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায়
যদি আপনি গিরিবাজ কবুতরকে চিনতে চান তাহলে আপনাকে গিরিবাজ কবুতরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে এদের শারীরিক গঠন কেমন এদের ঠোঁট চোখ পাখা আচরণ কেমন।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় কবুতরের মাংস খাওয়ার ৮টি উপকারিতা
একজন কবুতরের উড়ার ভঙ্গি পাখা ডানা চোখ শরীরের গঠন দেখে বোঝা যায় এটা আসলে কোন জাতের কবুতর। গিরিবাজ কবুতরের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নিচে আলোচনা করা হলো।
গিরিবাজ কবুতরের বৈশিষ্ট্য
- গেবাজ কবুতরের শারীরিক গঠন হয় মাঝারি আকারের এবং এদের শরীর কিছুটা চিকন প্রকৃতির হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের বুকের অংশ শক্ত হয় যেন এরা ওড়ার সময় বাতাস কাটতে পারে।
- গিরিবাজ কবুতরের লেজ অনেকটা লম্বা হয় এবং চওড়া প্রকৃতির হয় দেখতে খুবই সুন্দর।
- গিরিবাজ কবুতরের শারীরিক গঠন চিকন এবং এরা খুব বেশি শক্তপোক্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে।
- গিরিবাজ কবুতরের ঠোঁট সাদা কালো কিংবা হালকা রঙের হয়ে থাকে আর এদের ঠোঁট খুব পাতলা এবং মাঝারি ও লম্বাটে হয়ে থাকে।
- গিরিবাজ কবুতরের চোখ খুব উজ্জ্বল হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের চোখ দেখতে খুবই সুন্দর এবং সাদা ও লালচে রঙের হয়ে থাকে।
- এদের দৃষ্টি শক্তি হয় খুবই তীক্ষ্ণ প্রকৃতির।
- গিরিবাজ কবুতরের পাখা অনেকটা শক্তিশালী হয় এবং লম্বা হয় যা উড়তে সাহায্য করে।
- গিরিবাজ কবুতর মূলত আকাশে উড়ে বেড়ায় তাই এদের ডগা প্রায় লেজের ওপরের দিকে এগিয়ে বসে।
- গিরিবাজ কবুতর খুব দ্রুত উড়তে পারে আর এদের টানা টানা ডানা থাকে।
- গিরিবাজ কবুতরের আচরণ খুব বেশি চঞ্চল প্রকৃতির এরা ডানা ঝাপটাতে চাই সর্বদা।
- গিরিবাজ কবুতর সর্বদা উড়ে বেড়াতে ভালোবাসে তবে এরা সাধারণ কবুতরের মত সোজা উড়ে বেড়ায় না এরা আঁকাবাঁকা হয়ে উড়ে বেড়ায়।
- গিরিবাজ কবুতর আকাশে উল্টোপাল্টা হয়ে ঘুরে অনেক সময় উল্টে গিয়ে আবার সামনে নিয়ে উড়তে পারে।
গিরিবাজ কবুতর খুবই চঞ্চল প্রকৃতির এরা সাধারণ কবুতরের তুলনায় অনেকটা আলাদা এদের গঠনগত বৈশিষ্ট্য আলাদা আবার এদের উরার অঙ্গভঙ্গিও আলাদা।
গিরিবাজ কবুতরের মধ্যে উপরের এই কয়টি বৈশিষ্ট্য দেখে আপনি চিনতে পারবেন এটি গিরিবাজ কবুতর নাকি অন্য কোন জাতের কবুতর। বাজারে গিয়ে বাস কবুতরের চাহিদা এবং ডিমান্ড অনেক বেশি কারণ গিরবাজ কবুতর সর্বদা উঁচুতে উঠতে পছন্দ করে এবং এরা খেলোয়ার ধরনের।
গিরিবাজ কবুতর দিয়ে বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল প্রতিযোগিতা হয়। এই কবুতরগুলোর মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা বিজয়ের মাধ্যমে যেতে যেতে পারবে প্রচুর অর্থ।
তাই যারা কবুতর লালন পালন করতে ভালোবাসে তারা প্রত্যেকেই গিরিবাজ কবুতর খুব পছন্দ করে এদের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করার মত।
গিরিবাজ কবুতর দেখতে খুবই সুন্দর হয় এরা আকাশে আঁকাবাঁকা হয়ে উড়ে বেড়ায়। এছাড়াও গিরিবাজ কবুতর লালন পালন করলে অধিক মুনাফা লাভ করতে পারবেন কারণ বাজারে প্রচুর দামে বিক্রি করা হয় এই গিরিবাজ কবুতরগুলো।
গিরিবাজ কবুতর বছরে কতটি ডিম দেয়
অনেকেই নিশ্চয়ই জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেন যে একটি গিরিবাজ কবুতর প্রতি বছরে কতটি ডিম দিতে পারে?? সাধারণ কবুতরের মতোই একটি গিরিবাজ কবুতর প্রতিবছরে গড়ে 6 থেকে 8 বার পর্যন্ত ডিম দিতে পারে।
আরো পড়ুন: সমাসন এর উপকারিতা সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন
প্রতিবার দুইটি ডিম দেয় এর বেশি ডিম দিতে পারে না। প্রতিবছরের যদি ছয় থেকে আট বার দুইটি করে ডিম দেয় তাহলে প্রতি বছরে গিরিবাজ কবুতরের ডিম পাওয়া যায় মোট ১২ থেকে ১৬ টি।
গিরিবাজ কবুতর এর খাবার তালিকা
গিরিবাজ কবুতর সাধারণ কবুতরের মতোই খাবার খায় তবে আকাশে প্রচুর উড়ে বেড়ায় তাই এদের শরীরে শক্তি তৈরি করার জন্য একটু বেশি যত্ন নিতে হয় যেমন বেশি বেশি ধান ভুট্টা ছোলা সরিষা মসুর মুখ গম বাজরা ইত্যাদি শস্য জাতীয় খাবার গুলো খেতে দিতে হবে এগুলো শরীরের শক্তি উৎপন্ন করতে সাহায্য করে।
গিরবাজ কবুতরদের সর্বদা ভিটামিন জাতীয় এবং শাকসবজি জাতীয় খাবার গুলো খেতে দিতে হবে সাথেই দানাদার জাতীয় খাদ্য দিতে পারেন। আর সব সময় পরিষ্কার পানি পান করতে দিতে হবে।
সাধারণ কবুতরের তুলনায় গিরিবাজ কবুতরের একটু বেশি যত নিতে হবে। কারণ সাধারণ কবুতরের তুলনায় এরা আকাশে বেশি সময় পর্যন্ত উড়ে বেড়ায় এবং এরা খেলোয়াড় ধরনের এদের শরীরে শক্তির প্রয়োজন বেশি রয়েছে।
গিরিবাজ কবুতরের দাম ২০২৫
যারা গিরিবাজ কবুতর লালন পালন করেন তারা হয়তো অনেকেই জানেন যে বর্তমান বাজারে গিরিবাজ কবুতরের দাম কত?? গিরিবাজ কবুতর বলতে বোঝায় যারা আকাশে উড়ে বেড়ায় এবং খেলোয়াড় ধরনের কবুতর গিরিবাজ কবুতরের দাম সাধারণ কবুতরের তুলনায় একটু বেশি।
গিরিবাজ কবুতরগুলো ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা জোড়া বিক্রি করা হয়। পাইকারি দোকান থেকে ক্রয় করলে এক একটি গিরিবাজ কবুতর আপনি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
গিরিবাজ কবুতর রাজশাহী কাটাখালি হাট থেকে ক্রয় করলে এখানে অল্প দামে ক্রয় করতে পারবেন। রাজশাহী কাটাখালি হাটে গিরিবাজ কবুতর ৯০০ টাকা জোড়া বিক্রি করা হয়।
ভালো জাতের গিরিবাজ কবুতর ক্রয় করলে দাম একটু বেশি হতে পারে আর যদি লোকাল গিরিবাজ কবুতর ক্রয় করেন তাহলে এগুলোর দাম 200 টাকা থেকে শুরু হয়।
গিরিবাজ কবুতরের দাম এদের সৌন্দর্যতা এদের রং এবং এদের হাই ফ্লাইয়ার এর উপর নির্ভর করে। যে কবিতা যত বেশি সময় পর্যন্ত যত বেশি আকাশে উড়ে বেড়াবে সে কবুতরের দাম তত বেশি।
আশা করছি আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন গিরিবাজ কবুতরের দাম কত এবং গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায় গুলো কি কি। যদি আপনি নতুন কবুতর ক্রয় করতে চান অর্থাৎ নতুন কবুতর লালন পালন শুরু করছেন তাহলে আপনাকে জানতে হবে যে আসলে গিরিবাজ কবুতর কোনটা এবং সাধারণ কবুতর কোনটা।
গিরিবাজ কবুতর কি খাওয়া যায়
অনেকে জিজ্ঞাসা করেন গিরিবাজ কবুতর খাওয়া যায় নাকি?? বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গিরিবাজ কবুতর খাওয়া হয় গিরিবাজ কবুতর খেতে খুবই সুস্বাদু এটি সাধারণ কবুতরের মতোই এর মাংস খুবই সুস্বাদু।
গিরিবাজ কবুতরের মাংস সাধারণ কবুতরের মাংসের তুলনায় একটু কম হয় কারণ গিরিবাজ কবুতরের শরীরে বেশিরভাগ হাড্ডি থাকে। গিরিবাজ কবুতরের মাংস স্বাদে গুণে প্রায় সাধারণ কবুতরের মতোই।
তবে বেশিরভাগ মানুষ গিরিবাজ কবুতরের পালন করে শখের জন্য। গিরিবাজ কবুতর খেলোয়াড় ধরনের এটা দেখতে অনেকটা সুন্দর মানুষ শখের জন্য এদেরকে লালন পালন করে।
তবে অনেক জেলাতে গিরিবাজ কবুতরের খাওয়া হয় । গিরিবাজ কবুতর আপনি নিঃসন্দেহে খেতে পারবেন। এর স্বাদ সাধারণ কবুতরের মতো এবং এই কবুতরের মাংসের পুষ্টিগুণ ও সাধারণ কবুতরের মাংসের মত এবার আসুন আমরা দেখে নেই গিরিবাজ কবুতরের মাংসের উপকারিতা।
গিরিবাজ কবুতরের মাংসের উপকারিতা
আপনি কি গিরিবাজ কবুতরের মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন ইতিমধ্যেই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে গিরিবাজ কবুতরের মাংস খাওয়া যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে গিরিবাজ কবুতরের মাংস উৎপাদনে বিক্রি করা হয়।
গিরিবাজ কবুতরের মাংস থেকে উচ্চমানের প্রোটিন পাওয়া যায় এবং এটি সহজে হজম করা যায় এজন্য অন্য মানুষের তুলনায় এই মাংসের চাহিদা এবং দাম উভয় বেশি।
গিরিবাজ কবুতরের মাংস থেকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন পাওয়া যায় ভিটামিন b12 ভিটামিন বি৬ এবং জিঙ্ক পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলোর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী আসুন আমরা দেখে নেই গিরিবাজ কবুতরের মাংসের উপকারিতা।
গিরিবাজ কবুতরের মাংসের উপকারিতা
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয় ত্বক ভালো থাকে ত্বকের কোষ আরো উন্নত হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস জিংক সমৃদ্ধ হওয়ায় এই মাংস খাবার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে রক্তস্বল্পতা কিংবা অ্যানিমিয়া দূর হয় কারণ এই মাংস রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে শরীরের কোষ ও পেশি উন্নত হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে স্নায়ুতন্ত্র ভালোভাবে কাজ করে।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেলে ত্বক সুন্দর হয়।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস চোখের জন্য উপকারী।
- গিরিবাজ কবুতরের মাংস শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে এনার্জি যোগায়।
গিরিবাজ কবুতরের মাংসের সাধারণ কবুতরের মাংসের মতো হলেও এই কবুতরের মাংসের উপকারিতা বেশি।গিরিবাজ কবুতর থেকে প্রচুর আয়রন পাওয়া যায় যা রক্তস্বল্পতা ক্লান্তি ভাব দুর্বলতা দূর করে।
আশা করছি আপনারা সকলেই বুঝতে পেরেছেন গিরিবাজ কবুতরের মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে। রক্তস্বল্পতা দূর করতে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করতে বেশি বেশি গিরিবাজ কবুতরের মাংস খেতে হবে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হলো গিরিবাজ কবুতর চেনার উপায় গিরিবাজ কবুতরের দাম ২০২৫, গিরিবাজ কবুতর খাওয়া যায় নাকি? গিরিবাজ কবুতরের বৈশিষ্ট্য , গিরিবাজ কবুতরের মাংসের উপকারিতা সম্পর্কে ।
যারা গিরিবাজ কবুতর লালন পালন করেন তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি খুবই উপকারী আশা করছি আপনারা সকলে বুঝতে পেরেছেন কবুতর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি গিরিবাজ কবুতর খাওয়া যায় নাকি এবং গিরিবাজ কবুতর এর দাম কত।